বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আমাদের অহংকার আর গৌরবের প্রতীক । অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে লাল-সবুজের এই পতাকা এদেশের জনগণ অর্জন করেছে । জাতীয় পতাকার সবুজ আয়তক্ষেত্র বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির প্রতীক, আর বৃত্তের লাল রং মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের রক্তের প্ৰতীক । কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পতাকায় লাল বৃত্তে সোনালি রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত ছিল। মানচিত্র খচিত পতাকার মাধ্যমে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল এই ভূখণ্ডে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে । মানচিত্র খচিত এই পতাকা আমাদের সংগঠিত, একত্রিত ও ঐক্যবদ্ধ করেছে। ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে জাতীয় পতাকা তৈরির নকশা করা হয়। এই পতাকা তৈরির সহযোগী হিসেবে ছিলেন আ.স.ম. আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, হাসানুল হক ইনু, শিব নারায়ণ দাস ও কামরুল আলম খান খসরু। ১৯৭০ সালের ৬ই জুন গভীর রাতে অত্যন্ত গোপনভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ নং কক্ষে পতাকা তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। বলাকা বিল্ডিংয়ে তৃতীয় তলায় অবস্থিত পাক ফ্যাশন টেইলার্সে জাতীয় পতাকাটি সেলাই করা হয়।
১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চে যখন উত্তাল সারা দেশ, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পশ্চিম দিকের গেটে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ২রা মার্চ, ১৯৭১ সালে প্রথমবারের মতো উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম. আবদুর রব। এ যেন বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বেই পাকিস্তান রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যানের শামিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ইতোমধ্যে সারা দেশে শুরু হয়েছে অসহযোগ আন্দোলন। ২৩শে মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে ঘটে গেল অভাবনীয় ঘটনা । ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হলো। বহু বাড়ি-ঘরে ওড়ানো হলো বাংলাদেশের পতাকা। পাকিস্তানের প্রত্যাখ্যাত পতাকা আর ফিরে আসতে পারেনি। ত্রিশ লক্ষ শহিদ জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশের পতাকার মর্যাদা রক্ষার জন্য। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে পটুয়া কামরুল হাসানকে দায়িত্ব দেন জাতীয় পতাকার নকশা চূড়ান্ত করার। পটুয়া কামরুল হাসানের হাতেই আমাদের জাতীয় পতাকা বর্তমান রূপ লাভ করেছে।
জাতীয় পতাকা একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। জাতীয় পতাকার সম্মানের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্মান-মর্যাদা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই পতাকার সম্মান রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য ।
Read more